Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

নদ-নদী ও হাওড়

নেত্রকোণা জেলা নদী ও হাওড় বেষ্টিত । এর বুকচিড়ে বয়ে চর্তুদিক হতে উপজেলাগুলিকে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন নদী ও হাওড় । এ বিস্তীর্ণ জলরাশি দিয়ে প্রতিদিন শতশত কার্গো, ট্রলার যোগাযোগে পাথর, কয়লা, বালু সারা দেশেরপ্তানি হয়ে থাকে এবং নদী নিয়ে প্রতিদিন লঞ্চ বিভিন্ন জায়গায় চলাচল করে।

নেত্রকোণা জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত নদীর তথ্য

ক্রমিক নং

উপজেলার নাম

নদীর নাম

উৎপত্তিস্থল

দৈর্ঘ্য

০১.

নেত্রকোণা, আটপাড়া, পূর্বধলা

মগড়া

সুয়াই

৩৫.০০ কিঃ মিঃ

০২.

আটপাড়া, নেত্রকোণা, কেন্দুয়া

ধনাই খালী

কংশ হইতে চিনাই

৩৫.০০ কিঃ মিঃ

০৩.

কলমাকান্দা

উপদাখালী

অত্রাইখালী, ধনু নদী

২০.০০ কিঃ মিঃ

০৪.

বারহাট্টা, পূর্বধলা, মোহনগঞ্জ

কংশ

ভোগাই কংশ

৭০.০০ কিঃ মিঃ

০৫.

খালিয়াজুরী

ধনু নদী

জামালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ

৩০.০০ কিঃ মিঃ

০৬.

মদন

সাইডুলি

পূর্বধলা

৪০.০০ কিঃ মিঃ

০৭.

পূর্বধলা                          

সুয়াই

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র

২৫.০০ কিঃ মিঃ

০৮.

দূর্গাপুর

সোমেশ্বরী

বিজয়পুর

২০.০০ কিঃ মিঃ

০৯.

দূর্গাপুর-পূর্বধলা

ঢালা নদী

দূর্গাপুর

১৫.০০ কিঃ মিঃ

১০.

দূর্গাপুর

নিতাই

দূর্গাপুর

১২.০০ কিঃ মিঃ

সোমেশ্বরী নদী
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়ের বিঞ্চুরীছড়া, বাঙাছড়া প্রভৃতি ঝর্ণাধারা ও পশ্চিম দিক থেকে রমফা নদীর স্রোতধারা একত্রিত হয়ে সোমেশ্বরী নদীর সৃষ্টি।  অবশ্য এক সময় সমগ্র নদীটি সিমসাং নামে পরিচিত ছিল। ৬৮৬ বঙ্গাব্দের মাঘ মাসে সোমেশ্বর পাঠক নামে এক সিদ্ধপুরুষ অত্রাঞ্চল দখল করে নেয়ার পর থেকে নদীটি সোমেশ্বরী নামে পরিচিতি পায়। গারো পাহাড় অঞ্চলে গারো সমাজ সচেতন হওয়ার পর থেকে তারা আবারো সোমেশ্বরী নামের পরিবর্তে সিমসাং ডাকতে শুরু করেছে।
নেত্রকোণার সোমেশ্বরী নদীমেঘালয় রাজ্যের বাঘমারা বাজার (পূর্ব নাম বঙ বাজার) হয়ে বাংলাদেশের রাণীখং পাহাড়ের কাছ দিয়ে সোমেশ্বরী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। রাণীখং পাহাড়ের পাশ বেয়ে দণি দিক বরাবর শিবগঞ্জ বাজারের কাছ দিয়ে  সোমেশ্বরী নদী বরাবর পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়। কলমাকান্দা, মধ্যনগর হয়ে ধনু নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে সোমেশ্বরী। সোমেশ্বরীর মূলধারা তার উৎসস্থলে প্রায় বিলুপ্ত। বর্ষা মৌসুম ছাড়া অন্য কোন মৌসুমে পানি প্রবাহ থাকেনা। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে পাহাড়ীয়া ঢলে সোমেশ্বরী বরাবর দণি দিকে প্রবাহিত হয়ে নতুন গতিপথের সৃষ্টি করেছে। যা স্থানীয় ভাবে শিবগঞ্জ ঢালা নামে খ্যাত। বর্তমানে এ ধারাটি সোমেশ্বরীর মূল স্রোতধারা। এ স্রোতধারাটি চিতলির হাওর হয়ে জারিয়া-ঝাঞ্জাইল বাজারের পশ্চিমদিক দিয়ে কংস নদী সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ১৯৮৮ সালে পাহাড়ীয়া ঢলে আতরাখালী নামেসোমেশ্বরী নদীর একটি শাখা নদীটির সৃষ্টি হয়। সুসঙ্গ দুর্গাপুর বাজারের উত্তর দিক দিয়ে সোমেশ্বরী নদী থেকে পূর্বদিকে  প্রবাহিত হয়েছে আতরাখালী । কিছু দূর এগিয়ে সোমেশ্বরীর মূলধারা সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আতরাখালী  নদী এখন বেশ খরস্রোতা। আরো ভাটিতে সোমেশ্বরীর শাখা নদীর সৃষ্টি হয়েছে গুনাই, বালিয়া ও  খারপাই।
কংস নদী
ভারতের তুরা পাহাড়ে বিভিন্ন ঝর্ণার সম্মিলনে কংস নদীর উৎপত্তি। শেরপুরের হাতিবাগার এলাকা দিয়ে কংস বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। উৎপত্তি স্থল থেকে  শেরপুরের নালিতাবাড়ী পর্যন্ত এ নদীটির নাম ভূগাই। নালিতাবাড়ীর ৫মাইল ভাটিতে এসে দিংঘানা, চেল্লাখালী, দেওদিয়া মারিসি, মলিজি নামে উপনদী গুলো ভূগাইয়ের মিলিত হয়েছে। ভূগাই সে স্থানে বেশ খরস্রোতা হলে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে ফুলপুরের কাছাকাছি এসে খড়িয়া নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। খড়িয়া ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী।ফুলপুর উপজেলার পর থেকে ভূগাই নদীটি কংস নামে খ্যাত।মেঘালয় থেকে শিববাড়ীর পাশ দিয়ে নিতাই নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ধোবাউড়া সদর হয়ে দুর্গাপুরের শঙ্করপুরের কাছে নিতাই কংস নদীতে মিলিত হয়েছে। এতে কংস তার পূর্ব পথের গতির চেয়ে অনেকাংশে বেড় গেছে। নেত্রকোণা জেলার ভেতরে পূর্বধলা উপজেলায় কংসের দৈঘ্য ৯ মাইল। দুর্গাপুর, ধৌবাউড়া ও পূর্বধলা উপজেলার সীমানা বরাবর ২০ মাইল। নেত্রকোণা সদর উপজেলায় ৬ মাইল। নেত্রকোণা সদর, বারহাট্টা সীমানা বেয়ে ৭ মাইল। বারহাট্টা উপজেলায় কংসের দৈঘ্য ১১ মাইল। বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ সীমানা বেয়ে ৬ মাইল। মোহনগঞ্জ ও  সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার সীমানা বরাবর ১৯ মাইল প্রবাহিত হয়ে ঘোরাউৎরা নদীতে মিলিত হয়েছে। নেত্রকোণা জেলার ভেতর অনেক শাখা নদী কংস নদী থেকে বেরিয়ে  দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়েছে। পূর্বধলার সীমানোয় কংস থেকে একটি শাখা নদী দণি দিকে ছুটে গিয়ে ধলাই নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। যা কালিহর নদী নামে পরিচিত। কালিহর এর শাখা নদী খানিগাঙ। এক সময় খানিগাঙ বেশ খরস্রোতা ছিল। এখর মরাগাঙ। এর মধ্যে জারিয়া বাজারের পূর্বদিক দিয়ে শলাখালী শাখা নদীটি বেরিয়ে ধলামূলগাঁও ইউনিয়নের ভেতরদিয়ে লাউয়ারী নামে ত্রিমোহনীতে এসে মগড়া নদীতে পতিত হয়েছে। নেত্রকোণার পূর্ব ইউনিয়ন ঠাকুরাকোণা বাজারের পাশদিয়ে বরাবর দক্ষিণাদিকদিয়ে আটপাড়া উপজেলার পাশে এসে মগড়া নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।শুষ্ক মৌসুমে এ নদীটিতে তেমন পানি প্রবাহ থাকেনা। বর্ষায় বেশ থরস্রোতাহয়।
ধনুনদী
কোন স্থানে এ নদী বৌলাই কোন  স্থানে ঘোরাউৎরা নামে পরিচিত। এটি মেঘনা নদীর অন্যতম উপ নদী। এর উৎপত্তিস্থল ভারতের মেঘালয় রাজ্যে। মেঘালয়ের যাদুকাটা ও ধোমালিয়া এ দুটি নদী একত্রিত হয়ে ধনু নদীর মূল  প্রবাহেরসৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের সীমান্তে এসে এর একাংশ সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর হয়ে দক্ষিণেচলতে শুরু করেছে। তাহিরপুরে সোমেশ্বরী এসে ধনু নদীতে পতিত হয়েছে। এ নদীটি মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী হয়ে কিশোরগঞ্জে মেঘনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এ নদীটির প্রথমাং ধনু, মধ্যভাগ বৌলাই, শেষাংশ ঘোরাউৎরা নামে মেঘনায় পতিত হয়। ধনু একটি খরস্রোতানদী। নেত্রকোণা জেলার প্রায় সব কটি নদীই এ নদীতে পতিত হয়ে ভাটিতে গেছে।
মগড়া নদী
ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে মগড়ার উৎপত্তি। সেনেরচর নামক স্থান থেকে খড়িয়া নদী বেয়ে সারাসরি মগড়া নদীর প্রবাহ। সে প্রবাহ ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বুড়বুড়িয়া বিলে এসে পতিত হয়েছে। বুড়বুড়িয়া বিল  থেকে বেরিয়ে গজারিয়া ও রাংসা নদীর স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়ে ফুলপুরের ঢাকুয়া নামক স্থানের ভেতর দিয়ে সরাসরি পূর্বদিকে ধলাই নামে প্রবাহিত হয়েছে। পূর্বধলা উপজেলার হোগলা বাজারের পাশ দিয়ে পূর্বধলা সদরের ভেতর দিয়ে ত্রিমোহনী নামক স্থানে এসে দক্ষিণেপ্রবাহিত হয়েছে। ত্রিমোহনীতে এসে ধলাইয়ের সঙ্গে উত্তর দিক থেকে এসে লাউয়ারী নদী  মিলিত হয়েছে। সে স্থান থেকে মগড়া নামে পরিচিত। সেখান থেকে প্রথমে পাঁচ মাইল পর্যন্ত দক্ষিণেদিকে প্রবাহিত হয়ে দয়াগঞ্জ ঘাট থেকে সরাসরি পূর্ব দিকে আকাঁবাকা হয়ে নেত্রকোণা শহরের পাশ দিয়ে আটপাড়া উপজেলার দিকে চলে গেছে। পশ্চিম দিক থেকে শ্যামগঞ্জ হয়ে দয়াগঞ্জ ঘাটের কাছে মগড়ার সঙ্গে ধলাই নামের একটি স্রোতধারা মিলিত হয়েছে।
নেত্রকোণা জেলার  ঠাকুরাকোণা থেকে কংস নদী একটি শাখা নদী আটপাড়ায় মগড়ার মিলিত হয়েছে। গৌরীপুর দিক থেকে ছুটে আসা পাটকুড়া নদীটি বসুর বাজার এলাকায় এসে মগড়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। সাউডুলি, মগড়া ও পাটকুড়ার মিলিত স্রোতেকেন্দুয়ার গুগবাজার কাছে এসে যোগ হয়েছে। সেখানে বর্ষায় স্রোতেপ্রবাহ আনুপাতিক হারে বেশি থাকে। গুগবাজার হয়ে সে নদীটি মদন হয়ে ধনু নদীতে পতিত হয়েছে।
নেত্রকোণা জেলায় মগড়া নদীর গতিপথ সব চেয়ে বেশি। এ নদীটি কোথাও  ধলাই নামে  কোথাও মগড়া নামে খ্যাত। এ জেলার  চারশ বর্গ মাইল এলাকা দিয়ে মগড়া নদীর প্রবাহ রয়েছে। মগড়া কংস নদী ৮/১০ মাইল ব্যবধানে প্রায় ৪০ মাইল সমান্তরায় ভাবে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে।
 
হাওর
নেত্রকোণার অন্যতম হাওর মোহনগঞ্জের ডিঙ্গাপোতা, কেন্দুয়া উপজেলার জালিয়ার হাওর। জালিয়ার হাওর একসময় জলমহালের আওতায় ছিল। প্রকৃতিক কারনে হাওর এলাকাটি ভরাট হয়ে গেছে। বর্তমানে ২টি মাত্র ২০ একরের উর্ধে জলমহাল রয়েছে।
মদন উপজেলার উল্লেখযোগ্য হাওড় তলার হাওর, গনেশ্ব হাওর ও জালিয়ার হাওরের অংশ বিশেষ মদন উপজেলার আওতা। আটপাড়ার আটপাড়া উপজেলায় বাগড়ার হাওর ও গনেশ্বর হাওর উল্লেখযোগ্য।
খালিয়াজুরী উপজেলার উলেখযোগ্য নদী ধনু ও ধলাই। হাওর : কীর্ত্তনখোলা, গোবিন্দডোবা, লক্ষ্মীপুর, উত্তরবন্ধ, খৈড়তলা, লেপসিয়া ও জগনাতপুর হাওর। খালিয়াজুরী উপজেলায় ২৫টি জলমহাল রয়েছে। রোয়াইল, রানীচাপুর, ধলীমাটি, চৌতারা, চোনাই, বাজুয়াইল, মরাধনু, রতনী, জগনাতপুর গুনা, পেটনা, জগনাতপুর, খালিয়াজুরী গুনা, বেকী, ফেনী, মাকলাইন, বানোয়াইর,চেলাপাইয়া, কীর্ত্তনখোলা, মরাগাঙ, কাঠালজানা, চিনামারা, নরসিংহপুর,ছাইয়া, নাজিরপুর, মোরাদপুর জলমহাল।
 
লিখেছেন : আলী আহাম্মদ খান আইয়োব