ঐতিহাসিক স্থাপত্য
নেত্রকোণা জেলায় অনেক প্রাচীন স্থাপত্য রয়েছে। সে সকল স্থাপত্যগুলো অধিকাংশই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেছে। কিছু স্থাপত্য এখনো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। নেত্রকোণার ঐতিহাসিক স্থাপত্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মদনপুরের হযরত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দিন রুমি(র) মাজার, শাহ্ সুখূল আম্বিয়া মাজারের পাশে মোগল যুগের এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ, পুকুরিয়ার ধ্বংশপ্রাপ্ত দূর্গ, নাটেরকোণার ধ্বংসপ্রাপ্ত ইমারতের স্মৃতি চিহৃ, দূর্গাপুর মাসকান্দা গ্রামের সুলতানি যুগের এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ।
সুসলরাজ
সুসলরাজ রঘুনাথ সিংহ মাধবপুর ছোট পাহাড়ের উপর একটি শিব মন্দির স্থাপন করেছিলেন। সে মন্দিরটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেছে। তবে মাধবপুরের সেই পাহাড়ে এখন পর্যন্ত অসংখ্য ভগ্নইট পাওয়া যায়। সুসল জমিদার বাড়ির শেষ অস্তিত্বও এখন বিলীন। ষোড়শ শতাব্দির প্রথম ভাগে সুসল রাজ জানকি নাথ মল্লিক এক বিশাল পুকুর খনন করেছিলেন। সে পুকুর স্থানীয় ভাবে কমলারাণী দীঘি নামে খ্যাত। একটি মাত্র পাড় ছাড়া কমলারাণীর দীঘির আর কোন চিহৃ নেই। কালে ভরাট হয়ে গেছে। সুসল রাজ পরিবারের প্রথম পুরুষ সুমেস্বর পাঠক একটি দশভূজা মন্দির স্থাপন করেছিলেন। সে মন্দিরটি কোথায় নির্মিত হয়েছিল তা এখন আর কেউ বলতে পারেন না।
পূর্বধলার জমিদার বাড়ি ও পাগল পন্থি
পূর্বধলার জমিদার বাড়ির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়েছে স্বাধীনতার পূর্বেই। ঘাগড়া জমিদার বাড়ির প্রাচীন ইমারত গুলো ও বাঘবেড় এবং নারায়নদহ জমিদার বাড়ির ইমারতগুলো প্রায় বিলুপ্ত। সোনাইকান্দা, লেটিরকান্দা ও একই থানার লালচাপুর গ্রামের মোঘল যুগের মসজিদ গুলো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইচুলিয়া গ্রামের সুলতানি যুগের মসজিদ ও আগল সরকারের আক্রার মন্দিরটি ৭১ পরবর্তি কালে বিলুপ্ত হয়েছে। লেটিরকান্দা গ্রামে পাগল পন্থিদের পারিবারিক কবর রয়েছে। সে কবরস্থানে পাগল পন্থিকরণ শাহ্, টিপু শাহ্, ছপাতি শাহ্ সহ তাঁদের বংশের অন্যান্যদের কবর রয়েছে। সে কবরস্থানের প্রাচীরটি বৃটিশ শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল, যা এখনো দাঁড়িছে আছে । কিন্তু পাগল পন্থিদের সমাধিগুলো আধুনিক টাইলসে বেঁধে দেয়ায় ঐতিহাসিক মূল্য হারিয়ে ফেলেছে।
সাত পুকুর ও হাসানকুলী খাঁর সমাধি
আটপাড়া থানার রামেশ্বরপুর ও সালকি গ্রামে সাতটি পুকুর রয়েছে। বিশাল এ পুকুরগুলো অতি প্রাচীনকালে খনন করা বলে মনে হয়। বড় পুকুরের পশ্চিম পাশে হাসানকুলী খাঁর সমাধি। সে সমাধিটি কালো শিলা দিয়ে বাঁধানো। হাসানকুলী খাঁ ছিলেন একজন পুঁথি লেখক। তার পুঁখির সুত্র ধরে বিচার করলে এ পুকুর ও সমাধিটি মোঘলযুগের বলে ধরে নিতে হয়। এ ছাড়া শুনই গ্রামের প্রাচীন দূর্গ এখন বিলুপ্ত।
রোয়াইল বাড়ির প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন
কেন্দুয়া থানার ঐতিহাসিক স্থাপত্যের সংখ্যা যেমন বেশি তেমনি প্রাচীন। রোয়াইল বাড়ির প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন অন্যতম। ১৯৯২ খৃস্টাব্দে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কতৃক রোয়াইল বাড়িতে খনন কাজ পরিচালিত হলে বেরিয়ে আসে মসজিদ, দূর্গ, রাস্তা, পরিখা, কবরস্থান ও অনেক অট্টালিকা। তারমধ্যে বারোদুয়ারী ঢিবির দক্ষিণাংশে সমতল ভূমি। খননে আরো পাওয়া গেছে কারুকার্যময় অট্টালিকার চিহ্ন ও দূর্গে সৈনিকদের কুচকাওয়াজের প্রসস্ত মাঠ। ঐ প্রাচীন চিহ্নবহ স্থানটি ৮ হেক্টর। এটি আয়তকার ছিল বলে ধারনা করা হয়। দক্ষিণে বেতাই নদীর তীর ঘেঁষে ভাঙ্গন অথবা নোঙ্গরঘাটের জন্য দেয়াল গাঁথুনি ছিল। মূল দুর্গের দৈঘ্য ৪৫০ মিটার ও প্রস্থ ১৫৭ মিটার। ইটের পরিমাণ ৩৭১৮৬ সেন্টিমিটার। সন্মুখভাগে জোড়াদিঘি। এর একটির দৈঘ্য ২৭০ মিটার ও প্রস্থ ৭০ মিটার, অপরটির দৈঘ্য ১৫০ মিটার ও প্রস্থ ৯০ মিটার। খননে বেরিয়ে আসা মসজিদটির কারুকাজ ও ইটের আকৃতি সুলতানী আমলের। সংস্কার ও কারুকাজ সংযোজন হয়েছিল মুঘল যুগে।
একই থানার জাফরপুর গ্রামে একটি মসজিদের ইটের নকশা ও কারুকাজে রোয়াইল বাড়ির মসজিদের ইট ও কারুকাজের সঙ্গে মিল রয়েছে। মনে হয় এ দুটি মসজিদ একই সময়ে প্রাতিষ্ঠা লাভ করেছিল। একই এলাকা পরিখা বেষ্টিত ছিল বলে প্রমাণ মিলে। নোয়াপাড়া গ্রামের জমিদার ও আশুলিয়া গ্রামের অনেক প্রাচীন স্থাপত্য আজ বিলুপ্ত।
প্রাচীন নিদর্শন
মদন থানার ফতেপুর ও জাহাঙ্গীরপুরের দেওয়ানদের বাতিঘরের অস্তিত্ব এখন আর নেই। চাঁনগাও গ্রামে ১টি প্রচীন মসজিদ রয়েছে। ধারনা করা হয় মসজিদটি মোঘল যুগে নির্মিত হয়েছিল। জেলার মোঘল যুগে নির্মিত অন্যান্য মসজিদের আকৃতি ও প্রকৃতির সঙ্গে এর সাদৃশ্য রয়েছে। এছাড়া মদন সদরে শাহ্ সুফি সাধক সৈয়দ আহম্মদ বসরির মাজার শরীফ। বারহাট্রা থানার পিরিজপুর গ্রামে প্রাচীন জোড়া পুকুর। এর মধ্যে বড় পুকুরটি ৬ শতাংশ ও ছোট পুকুরটি ২ শতাংশ ভূমি নিয়ে গঠিত। প্রাচীন পাট্রা ইটের গাথুনীতে পুকুরের ঘাট বাঁধানো ছিল। তার ধ্বংসপ্রাপ্তের চিহ্ন এখনো পরিলক্ষিত হয়। বাড়ির নাম কোর্টবাড়ি, বাজার এখন না থাকলেও স্থানের নাম দেওয়ানের বাজার। সে এলাকায় ভগ্ন ইটের ছড়াছড়ি রয়েছে। বাড়ি নির্মাণের পরিবেশ এখনো চমৎকার। আমঘোয়াইল গ্রামের দক্ষিণের সাউথপুরে একটি ভাঙ্গা ইমারত রয়েছে। যা ৩৬০ বর্গফুট। এ ইমারতটি অতি প্রাচীন তা সহজেই অনুমিত হয়। সিংদা গ্রামে একটি প্রাচীন দেব মন্দির ছিল। মন্দিরটি এখন ধ্বংসপ্রাপ্ত। বারহাট্রা বাজারের মন্দিরটিও অতি প্রাচীন তা সহজেই অনুমিত হয়।
মোহনগঞ্জের সেখের বাড়ির মসজিদটি সুলতানি আমলে নির্মিত। মাঘান গ্রামে মোঘল যুগের আরো একটি মসজিদ রয়েছে। দৌলতপুর গ্রমে ৮৭৬ বঙ্গাব্দে নির্মিত পাশাপাশি দুটি মন্দির আছে। সেথায় ধ্বংসপ্রাপ্ত ইমারতগুলো এখন তার শেষ চিহ্নও ধরে রাখতে পারেনি।
খালিয়াজুরী থানার প্রাচীন স্থাপত্য বলতে শুধুমাত্র একটি পর্যবেক্ষণ ইমারতের ভাঙ্গা অংশ রয়েছে। সেই ইমারতটি প্রাচীন বলে অনুমান করা হয়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস