নেত্রকোণা জেলার ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা
নেত্রকোণা জেলাটি সুদূর অতীত কাল থেকেই বিভিন্ন ধরণের খেলাধুলার জন্য সুপরিচিত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ফুটবল, ক্রিকেট, হাডুডু, কুস্তি, ব্যাডমিন্টন, লাঠিখেলা, সাঁতার ইত্যাদি।
ফুটবল
নেত্রকোণা জেলায় ফুটবল একটি জনপ্রিয় খেলা হিসেবে পরিচিত। এই জেলায় বেশ কিছু স্বনামধন্য ফুটবলার জন্ম গ্রহণ করেছেন। মহকুমা থাকা অবস্থায় নেত্রকোণার ৮-১০ জন খেলোয়াড় ময়মনসিংহ জেলা দলে অর্ন্তভূক্ত থাকত। নেত্রকোণার খেলোয়াড় ময়মনসিংহ জেলা দলের দায়িত্ব পালন করেছে। এছাড়া ২ জন সেরা খেলোয়াড় কলকাতা ফুটবল লীগে অংশ গ্রহণ করত। তারা হলেন সেকান্দার আলী খান ও চাঁন মিয়া চৌধুরী। পরবর্তীতে নেত্রকোণা জেলার যে সকল ফুটবলারগণ ঢাকা ১ম বিভাগ ও ২য় বিভাগ ফুটবল লীগে ও ময়মনসিংহ ফুটবল লীগে অংশ গ্রহণ করেছেন তারা হলেন আশরাফ উদ্দিন খান (প্রাত্তন এম. পি), আব্দুল জববার, আব্দুল গফুর (হকি ও ফুটবল), দেবীনাস, আলাউদ্দিন খান, হায়দার জাহান চৌধুরী, নায়েব উদ্দিন, রমাকান্ত, অমল কুমার সেন, সুনিল সরকার, সাইদুর রহমান, আবুল খায়ের চন্দন, আবু নাসের তালুকদার মিলু, আবু বকর সিদ্দিক, নাজমুল হাফিজ জামরুল, তায়েব আহম্মদ, শহিদুল ইসলাম উজ্জ্বল, জ্ঞানেশ চন্দ্র সরকার, আবদুর বর রববানী, আতাউর রহমান ননী, আবুল কাদির, আব্দুর রহিম কানু, অশীম কুমার ভদ্র, রূপু, হজরত আলী, মোখলেছুর রহমান, শ্যামল সরকার, সত্য, সাইফ খান বিপ্লব প্রমুখ। পরবর্তীতে প্রিমিয়াম ডিভিশনে যারা খেলেছেন তারা হলেন আরিফ খান জয়, শুভ্র, জনি, তাপস, রবিন, সোহাগ, আওয়াল। বাংলাদেশ জাতীয় দলে যারা খেলছিলেন তারা হলেন, নাজমূল হাফিজ জামরুল, তায়েব আহম্মদ, আরিফ খান জয় (বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ছিলেন), এবং তার দুই সহোদর শুভ্র ও জনি ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৮৪ সনে নেত্রকোনা জেলা ফুটবল দল সোহরাওয়ার্দী কাপ জাতীয় যুব ফুটবল প্রতিযোগিতায় জোনাল খেলায় (মৌলভীবাজার) রানার্স আপ ও চূড়ান্ত পর্বের খেলায় (কুমিল্লায়) রানার্স আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ১৯৮৬, ১৯৯২ ও ১৯৯৬ সনে নেত্রকোণা ফুটবল দল শেরে বাংলা কাপ জাতীয় ফুটবল প্রতিযোগিতায় জোনাল খেলায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। বর্তমানে নেত্রকোণা জেলার ৩ জন ফুটবলার ঢাকা ও দিনাজপুর বি কে এস পিতে অধ্যয়নরত আছে। নেত্রকোণা জেলায় ফুটবল লীগ, আন্তঃ উপজেলা, বালক ফুটবল প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। ২০০৯ সন থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফুটবল প্রতিযোগিতা অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এতে বারহাট্টা উপজেলা চ্যাম্পিয়ন হয়। নেত্রকোণার গ্রামে গঞ্জে খেলা বলতে ফুটবলকে বুঝে থাকে।
ক্রিকেট
নেত্রকোণা জেলায় ক্রিকেট খেলা ১৯৮৮ সন হতে লীগ রূপ লাভ করে। বর্তমানে ১ম বিভাগ ও ২য় বিভাগ ক্রিকেট লীগ অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সন থেকে নির্মাণ স্কুল ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে করে স্কুলের ছাত্রদের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীতে ঢাকা ১ম বিভাগ ও ময়মনসিংহ ১ম বিভাগ ক্রিকেট লীগে নেত্রকোণার ৪ জন খেলোয়াড় অংশ গ্রহণ করে। বর্তমানে ঢাকা ক্রিকেট লীগে ৩ জন খেলোয়াড় অংশ গ্রহণ করে থাকে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কর্তৃক গেইম ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের অধীনে কয়েক বছর যাবৎ আয়োজিত অনুর্ধ- ১৪, ১৬ ও ১৮ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ও জাতীয় স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট দ্বারা জেলার অনেক ক্ষুদে ক্রিকেটার সাফল্য অর্জন করেছে। এরা নেত্রকোণা জেলার জন্য ৪টি পুরস্কার অর্জন করেছে। ২০০৮ ও ২০১০ সনে নেত্রকোণায় অনুর্ধ- ১৪ ও অনুর্ধ- ১৬ বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করেছে। এতে ৪টি জেলা দল অংশগ্রহণ করেছে। নেত্রকোণা জেলা ক্রিকেট দল জাতীয় ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপে নিয়মিত ভাবে অংশ গ্রহণ করে আসছে।
নেত্রকোণা জেলা সদরে আন্তঃ স্কুল অনুর্ধ-১৬ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় ৮টি স্কুল দল অংশ করে থাকে। ২০১০ সনে দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
নেত্রকোণা জেলা ক্রিকেট একাডেমী দীর্ঘদিন যাবৎ ক্ষুদে ক্রিকেটারদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। বর্তমানে এই ক্ষুদে ক্রিকেটারদের মধ্য থেকে ঢাকা ও দিনাজপুর বি, কে, এস,পিতে ৩ জন ক্রিকেটার প্রশিক্ষণরত আছে। অনুর্ধ ১৬ বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টে নেত্রকোণা ক্রিকেট দল ময়মনসিংহ অনুর্ধ-১৬ দলকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
ব্যাডমিন্টন
নেত্রকোণায় ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট একটি জন প্রিয় শীতকালীন খেলা হিসাবে চালু আছে। ছাত্র/ছাত্রীসহ বিভিন্ন বয়সী ব্যক্তিরা এ খেলায় অংশ গ্রহণ করে থাকে। নেত্রকোণা জেলা ক্রীড়া সংস্থার ব্যবস্থাপনায় ব্যাডমিন্টন খেলা পরিচালিত হয়েছে। এ ছাড়া মোক্তার পাড়াস্থ এন, আই, খান ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট কয়েক বছর পরিচালিত হয়েছে। বর্তমানে এ আর খান পাঠান নামে ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টন কয়েক বছর যাবৎ নেত্রকোণা শহরে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অনেক প্রতিভাবান ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় পাওয়া গেছে। এ ছাড়া জাতীয় ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় নেত্রকোণা জেলা দল অংশ গ্রহণ করে থাকে। বর্তমানে স্কুল কলেজ এবং ক্লাব পর্যায়ে ব্যাডমিন্টন খেলা পরিচালিত হয়ে থাকে।
ভলিবল
নেত্রকোণা জেলা ক্রীড়া সংস্থার ব্যবস্থাপনায় ভলিবল লীগ অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া ২০০৮ সনে জেলা প্রশাসক ভলিবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। নেত্রকোণায় স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে এ খেলার প্রচলন আছে। গ্রামে গঞ্জে বিভিন্ন ক্লাবের উদ্দ্যোগে ভলিবল খেলা ও প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
এ্যাথলেটিকস
নেত্রকোণা জেলায় স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে এ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতা নিয়মিত ভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। নেত্রকোণা জেলা ঘোষণার পূর্বে আবু সিদ্দিক আহম্মদ, ও অশীম কুমার ভদ্র সেরা ক্রীড়াবিদ ছিলেন।
দাবা
নেত্রকোণা জেলা ক্রীড়া সংস্থার উদ্দ্যোগে দাবা খেলার প্রচলন আছে। জাতীয় পর্যায়ে দাবা খেলায় নেত্রকোণা জেলা থেকে প্রতিযোগীরা অংশ গ্রহণ করে। এ ছাড়া স্কুল, কলেজ ও ক্লাব পর্যায়ে দাবা খেলার প্রচলন আছে।
কারাতে
নেত্রকোণা জেলা ক্রীড়া সংস্থার ব্যবস্থাপনায় কারাতে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত না হলেও ক্লাব পর্যায় থেকে অত্র সংস্থার মাধ্যমে প্রতিযোগীরা জাতীয় পর্যায়ে ও ঢাকা বিভাগীয় কারাতে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে থাকে। ৭ম বাংলাদেশ গেইমস প্রতিযোগিতায় নেত্রকোণা জেলা দল ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেছিল।
সাঁতার
নেত্রকোণা জেলার স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে সাঁতার প্রতিযোগিতার ব্যাপক প্রচলন আছে। এদের মধ্যে যারা সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ ও পুরস্কার প্রাপ্ত হয়েছেন তারা হলেন ছবি বিশ্বাস, খগেন্দ্র চন্দ্র সরকার, ফজলুর রহমান খান (বর্তমানে সার্ক রেফারি), সেন্টু, বৈরাম খাঁ, তাপস ভট্টাচার্ষ। বর্তমানে খালিয়াজুরী ও বারহাট্টা উপজেলায় মানসম্পন্ন সাঁতারু আছে।
কুস্তি খেলা
কুস্তি খেলা গ্রামাঞ্চলের একটি জনপ্রিয় খেলা। এখনো গ্রামের বাজারে মাইক ও ঢোল পিটিয়ে কুস্তি খেলার আয়োজন করা হয়। যে গ্রামের কুস্তিগীর খেলায় অংশ গ্রহণ করে তাকে সেই গ্রামে ‘‘মাল’’ বলা হয়ে থাকে। এতে কুস্তিগীর গর্ব বোধ করে থাকেন। বর্ষাকালে এই খেলা বেশী হয়ে থাকে।
লাঠি খেলা
লাঠি খেলা গ্রামের ঐতিযবাহী একটি খেলা। নেত্রকোণা জেলায় যেখানে মেলা বসে সেইখানে লাঠি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এটি একটি গ্রাম ভিত্তিক খেলা বলে নেত্রকোণা জেলায় প্রচলন আছে।
খেলাধুলায়কৃতিত্বের অধিকারীদের তালিকাঃ
১৯৫৫-১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ
ক্রমিক | খেলোয়ারের নাম | ঠিকানা | টুর্নামেন্ট/প্রতিযোগিতা | অর্জিত কৃতিত্ব | সন |
১ | দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় টিম | নেত্রকোণা সদর | প্রাদেশিক ফুটবল লীগ | চ্যাম্পিয়ন | ১৯৫৫ |
2 | দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় টিম | নেত্রকোণা সদর | যোগমায়া শিল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ | ’’ | ১৯৫৭ |
3 | আব্দুল হামিদ ফারাশ পিতা- তাহের উদ্দিন ফারাশ | নেত্রকোণা সদর | জেলা যুব র্যালি (দৌড়) | ২য় | ১৯৬২ |
4 | দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় টিম | নেত্রকোণা সদর | জেলা যুব র্যালি ( হা-ডু-ডু) | ২য় | ১৯৬২ |
5 | সুকোমল কান্তি বল | জেলা যুব র্যালি (রচনা প্রতিযোগিতা) | ২য় | ১৯৬২ | |
6 | মোস্তফা কামাল আজাদ পিতা- আববাস আলী | নেত্রকোণা সদর | জেলা যুব র্যালি (এক মাইল দৌড়) | ১ম | ১৯৬৩ |
7 | দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় টিম | নওয়াব আলী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ | রানার্স আপ | ১৯৬৩ | |
8 | মোঃ সিরাজ উদ্দিন পিতা-আবুল হোসেন | শিবগঞ্জ রোড, নেত্রকোণা । | হাই জ্যাম্প প্রাদেশিক | ৩য় | ১৯৬৪ |
9 | দবির উদ্দিন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ | মোহনগঞ্জ, নেত্রকোণা । | ১০০ মিঃ দৌড় প্রাদেশিক | ১ম | ১৯৬৫ |
10 | জালাল উদ্দিন | গোলক নিক্ষেপ আন্তঃজেলা ক্রীড়া প্রতিযোগিতা | ১ম | ১৯৬৫ | |
11 | শাহ আলম | আন্তঃজেলা হাই জ্যাম্প | ১ম | ১৯৬৫ | |
12 | দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় টিম | ডিভিশনাল ফুটবল প্রতিযোগিতা, ঢাকা। | চ্যাম্পিয়ন | ১৯৬৫ | |
13 | বৈরাম খান | ২০০ মিঃ সাঁতার প্রাদেশিক | ৩য় | ১৯৬৫-১৯৬৬ |
মহিলাদের খেলাধুলা
নেত্রকোণা জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার উদ্দ্যোগে ভলিবল, কাবাডি, হ্যান্ডবল, ব্যাডমিন্টন, কেরাম, দাবা ইত্যাদি খেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। উক্ত খেলাগুলির প্রতিযোগিতা ও অনুশীলন নিয়মিত ভাবে নেত্রকোণায় হয়ে থাকে। ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ মহিলা হ্যান্ডবল দল নেত্রকোণায় জোনাল খেলায় অংশ গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া নেত্রকোণায় মহিলা ক্রিকেট প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদের মধ্যে ২ জন খেলোয়াড়কে ঢাকা থেকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। সম্প্রতি ব্রাকের উদ্দ্যোগে হিরণ পুর স্কুল মাঠে মেয়েদের ক্রিকেট প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।
খেলাধুলার অবকাঠামো
নেত্রকোণা জেলায় একটি মাত্র জেলা স্টেডিয়াম আছে। এছাড়া শহরে মোক্তার পাড়ার মাঠ, কলেজ মাঠ, দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ ও চন্ডনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ আছে। উক্ত মাঠগুলোতে জেলা শহরে খেলাধুলা পরিচালিত হয়ে থাকে। এছাড়া উপজেলায় স্কুল ও কলেজ সমূহের নিজস্ব মাঠ রয়েছে। এগুলো খেলাধুলার জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS